নিজ দেশে গেল বিলুপ্ত ছিটবাসীর প্রথম দল
https://www.obolokon24.com/2015/11/lalmonirhat.html
তাহমিন হক ববি॥
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দি জীবনের মুক্তির পর নিজ দেশে গমন করলেন বিলুপ্ত ছিটমহলের ৬২ জন। বৃহ¯পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বুড়িমারী-চ্যারাবান্ধা অভিবাসন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পা রাখেন তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে ভারতে প্রবেশ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাজশাগীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সন্দীপ মিত্র ও বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের নেতারা।এর আগে উভয় দেশে বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতারা বুড়িমারী বন্দরে মিষ্টি বিনিময় করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ওই কমিটির ভারত ইউনিটের সভাপতি দ্বীপ্তিমান গুপ্ত, বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মঈনুল হক, স¤পাদক গোলাম মোস্তফা, লালমনিরহাট ইউনিটের সাধারণ স¤পাদক আজিজুল ইসলাম।বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ দেশে চলে যাওয়ার সময় সেখানে সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেকে আতœীয় স্বজন রেখে চলে যাওয়ায় সেখানে বিদায় জানাতে ভিড় করে অনেকে। আর কোন দিন দেখা হবে কিনা কে জানে। তাই নিজ দেশে চলে যাওয়ার যে আনন্দ বা হাসি সেটি সেখানে ম্লান ছিল। ছিল শুধু চোখের জলে ভাসিয়ে কান্নার আওয়াজ।
বুড়িমারী ইমিগ্রেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, ট্রাভেল পাশধারী বিলুপ্ত ছিটমহলের ৬২জন নারী-পুরুষ ও শিশু বেলা ২টায় চ্যারাবান্ধা বন্দর পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।বুড়িমারী বন্দরের জিরো লাইন পার করা মাত্রই ছিটবাসীকে ফুল দিয়ে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে মিষ্টি মুখ করান ভারত সরকারের প্রতিনিধিরা। সেখানে চেখে পড়ে সাদা শাড়ি পরিহিত ভারতের কলেজের ছাত্রীরা ফুল দিয়ে বরন করছে। এ সময় বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় কমিটির ভারত ইউনিটের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ছিটবাসীকে অভ্যর্থনা জানাতে চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে উপস্থিত হয়েছেন পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য সরকারের বিধায়ক ররীন্দ্র নাথ, ভারতীয় লোকসভার সদস্য পরশ অধিকারী।বুড়িমারী স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন সুত্র মতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারীর বিলুপ্ত এক ও দুই নং ছিটের ১৮ পরিবারের ৬২জন প্রথম দফায় নিজ দেশে গেলেন।
চলতি বছরের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের মুক্তি মিলে ভারত বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষের। যার মধ্যে ১১১টি বাংলাদেশের এবং বাকী ৫১টি ভারতের ভুখন্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি এবং নীলফামারীতে রয়েছে ৪টি।বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে ৯৭৯জন মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব নিতে আবেদন করেন। পক্ষান্তরে ভারতের ভেতরে থাকা ৫১টি ছিটমহল থেকে কেউ বাংলাদেশে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন নি।এদের মধ্যে লালমনিরহাট জেলার ৩টি উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত ৫৯টি ছিটমহলের ৩৯টি পরিবারের ১৯৫জন লোক ভারতের ট্রাভেল পাস পান। তাদের যোগাযোগের সুবিধার জন্য কয়েকটি দলে বিভক্ত করা।
বৃহ¯পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের প্রথম দলটির ৬২জন ভারতে চলে গেলেন। একই পথে আগামী ২৩ নভেম্বর লালমনিরহাটের দ্বিতীয় দলে ১৩৩ জন ভারত যাবেন।
এদিকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি অভিবাসন সীমান্ত পথ দিয়ে পঞ্চগড় জেলার ১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের ৯৯ পরিবারের ৪৮৭ জন সদস্য ভারত যাবেন। এদের মধ্যে এই পথে ১৫ পরিবারের ৪৯ জন্য সদস্যের প্রথম দলটি ভারত যাবে আগামী ২২ নভেম্বর। ২৩ নভেম্বর যাবে ৩১ পরিবার, ২৪ নভেম্বর যাবে ২৯ পরিবার ও ২৬ নভেম্বর যাবে ২৩ পরিবার।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় নির্দিষ্ট তারিখে যদি কোন পরিবার ভারত গমন ব্যর্থ হন, সে ক্ষেত্রে ওই সব পরিবারকে ৩০ নভেম্বর ভারত গমনের সুযোগ দেয়া হবে।