বিশাল তাজিয়া মিছিল ॥আশুরায় সৈয়দপুরে সুন্নি মুসলমানদের উৎসব
https://www.obolokon24.com/2015/10/saidpur_24.html
আবু ফাত্তাহ্ কামাল পাখি,স্টাফ রিপোর্টারঃ
পবিত্র আশুরা উপলে নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবাঙালি সুন্নি মুসলমানরা মেতে উঠেছে উৎসবে। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শুরু হয়েছে আবাল বৃদ্ধা বনিতার অংশগ্রহনে তাজিয়া মিছিল সারা রাত ব্যাপী চলে। তাই সৈয়দপুর শহরে সারারাত ঢোলের বাজনা, লাঠি খেলা ও তাজিয়া মিছিলে মুসলিমদের ঢল নেমেছিল। উত্তরবঙ্গের সব চেয়ে সৈয়দপুরেই প্রায় ৭০টি ইমামবাড়া রয়েছে। মান্নত, নিশান চড়ানো ও ফাতিহা পাঠ হয়ে থাকে এসব ইমামবাড়ায়। রাত ১০টার দিকে প্রতিটি ইমামবাড়ায় বসানো হয় তাজিয়া। স্বাধীনতার পর থেকে অবাঙালিরা তাদের কৃষ্টি ও সভ্যতার কিছুটা পরিবর্তন আনলেও মহরমকে ঘিরে তাদের সংস্কৃতি অটুট রয়েছে।
পবিত্র আশুরার বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) এর দুলদুল ঘোড়ার সজ্জিত প্রতিকী দুলদুল ঘোড়া (পাইক), ইমামবাড়াগুলোতে নিশান উড়ানো, আলোকমালায় সজ্জিতকরণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল, শরবত বিতরণ, কারবালার উদ্দেশ্যে মান্নত পাইকদের ধর্মীয় শোভাযাত্রা, তাজিয়া মিছিল ও ঢোল এবং লাঠি খেলা। শহরের প্রায় ৭০টি ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ এসব নানা আয়োজন পালন করছেন।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ প্রশাসনের প থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে কেউ কোন আঁতশবাজি বা ধারালো অস্ত্র বা শিকল ব্যবসার নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। শান্তিপূর্নভাবে তাজিয়া মিছিল সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে গত রাতে ঢাকার হোসেনি দালালে আশুরায় বোমা হামলায় একজন নিহত ও শতাধিক আহত হবার ঘটনায় শুক্রবার রাত থেকে সৈয়দপুর শহরে ব্যাপক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করে টহল জোড়দার করা হয়েছে।
উল্লেখ যে, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে আশুরার অনুষ্ঠান সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে। কারণ, দেশের একমাত্র সৈয়দপুরেই এককভাবে এত অধিক সংখ্যক উর্দু ভাষাভাষি মানুষ বাস করে। এর পেছনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক পটভূমি। উপমহাদেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেল কারখানাকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ আমলে দ জনশক্তি হিসেবে সাত হাজার মানুষকে বিহার রাজ্য থেকে আনা হয়েছিল। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগ এবং ৭১-এর পরও তারা বংশ পর¤পরায় এখানেই রয়ে যায়। ধর্মীয় অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে তাদের কাছে আশুরার গুরুত্বও কম নয়। যেহেতু তাদের মধ্যে শিয়া, সুন্নি উভয় মতের অনুসারী রয়েছে, সেহেতু অনুষ্ঠান উদযাপনের তরিকাতেও রয়েছে ভিন্নতা।অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব, আশুরার আগের রাত। এই রাত তারা নানা কর্মকান্ড ও সংস্কার পালনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে। শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বড় বড় তোরণ। রঙ্গীন কাপড়ে বানানো তোরণের গায়ে জ্বলছে হরেক রং এর বাতি। নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক তাজিয়া। তাজিয়াগুলো দেখতে মসজিদ বা মাজারের গুম্বুজ আকৃতির। গত ৩৪ বছর ধরে তাজিয়া নির্মাণ করে আসছেন এখানকার তাজিয়া শিল্পী খুরশিদ আলম।তিনি জানান, মূলত ইমাম হোসেন (রা.) এর মাজারকে স্মরণে রেখে তা নির্মাণ করা হয়। দেখা গেল আলাদাভাবে প্রতিটি মহল্লায় একাধিক তাজিয়া বানানো হয়েছে। তাকে ঘিরে রয়েছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। একসাথে তালে তালে বাজানো হচ্ছে অনেক ড্রাম। এর শব্দে রাতের সৈয়দপুরে বিরাজ করে এক নির্ঘুম আবহ।