অন্যের পুকুর ও জমি বর্গা নিয়ে রবিউলের ভাগ্য বদল

মো. জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

বসবাসের জমি ছাড়া কিছুই নেই রবিউলের। চাষাবাদের কোন প্রশিণও নেই তার। শুধু রয়েছে মনোবল আর দৈহিক শক্তি। নিজের মনোবল আর দৈহিক শক্তি কাজে লাগিয়ে অন্যের এক বিশাল পুকুর লিজ নেয় সে। শুরু করে পুকুরে মাছের চাষ আর পুকুর পাড়ে সবজির চাষ। সব ধরনের দেশীয় মাছে ভরা পুকুর। আর পুকুর পাড়ে আগাম শীত মৌসুমের সবজির চাষাবাদ শুরু করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর শহরের কুন্দল এলাকার ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন মৃত সিরাজুল ইসলামের তৃতীয় পুত্র রবিউল (৪০) চাকুরী করছেন সৈয়দপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ে প্রহরী হিসাবে। বেতন যা পান তা দিয়ে ৭ সদস্যের সংসারে অভাব-অনটন যেন কিছুই ছাড়ে না তার। এজন্য তিনি অন্যের জমিতে শুরু করেন নার্সারী ব্যবসা। প্রায় দেড় যুগ ধরে এ ব্যবসা করেন তিনি। সংসারও চলছিলো ভাল। কিন্তু বর্গা নেয়া জমিটির মালিক জমিটি ফেরত নেয়ায় একেবারেই ভেঙ্গে পড়েন তিনি। পরে ২০১২ সালে দেড় একর একটি পুকুর ৩ বছরের জন্য লীজ নেন তিনি। এরপর সেখানে শুরু করেন মাছের চাষ ও পুকুর পাড়ে সবজির চাষ। প্রায় ৩ বছরেই আশপাশের লোকজনদের তাক লাগিয়ে দেন তিনি। বাৎসরিক ৩৫ হাজার টাকা মালিককে প্রদান করার চুক্তিতে লীজ নিয়ে তিনি এক বছরে দ্বিগুন লাভ করেন। এই লাভ দেখে পুকুর মালিক নিজেই সেখানে মাছ চাষ করবেন বলে চুক্তির আগেই তিনি সেটি ফেরত নিয়ে নেন। এতে রবিউল পাগলের ন্যায় ঘোরাফেরা করতে থাকলে পার্শ্ববর্তী এক ব্যক্তি তাকে তার দুই একরের একটি পুকুর ১৮ হাজার টাকা বাৎসরিক চুক্তির বিনিময়ে ৬ বছরের জন্য লীজ দেন। এতে পুনরায় রবিউল মনোবল ফিরে পায়। পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ আর অকান্ত পরিশ্রম করে পুকুর পাড়ে রোপন করেন ঢেড়স, সিম, শসা, বরবটি, পেঁপে, লাউ, পুইঁশাকসহ নানা ধরনের সবজি। তার অকান্ত পরিশ্রম বিফলে যায়নি। গাছে গাছে ধরেছে অসংখ্য সবজি। শীতকালীন আগাম সবজি দেখে চোখ মুখ যেন জ্বল জ্বল করছে। অনেকে রবিউলের বাগান গিয়ে সবজিও কিনে আনছেন। রবিউল বলছেন, আসলে শীতকালীন সবজির ফলন আগাম হওয়ায় দামও ভাল পাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, এভাবে যদি মনোবল ভাল থাকে এবং শরীরে শক্তি থাকে তাহলে আগামী ৩ বছরে তিনি তার কোমর শক্ত করে দাঁড়াতে পারবেন। চাষাবাদের জন্যও তিনি নিজের কষ্টের উপার্জিত পয়সায় ২/১ বিঘা জমি কিনতেও পারবেন বলে তিনি জানান। তবে সরকার যদি সুদমুক্ত আর্থিক সহায়তা করেন তাহলে সৃষ্টিশীল পদ্ধতিতে নতুন নতুন সবজি চাষাবাদ করতে পারবেন। এছাড়া সরকারের নির্দেশে যদি বেকার যুবকদের সবজি ও মাছ চাষে বাধ্য করাতেন তাহলে বাংলাদেশে বেকারত্ব যেমন ঘুচে যেত, তেমনই দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড শক্ত হত।
কৃষি কর্মকর্তা হুমায়রা মন্ডল বলেন, রবিউলের মাছ ও সবজি চাষ দেখে তিনি অবাক হয়েছেন। মনোবল ও দৈহিক শক্তির ফসল  যে মানুষটি স্বাবলম্বি করে তার জ্বলন্ত প্রমাণ রবিউল ইসলাম। সরকারীভবে সাহায্যের ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে জানান তিনি।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6269791907857371531

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item