রাজাকার কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের চেষ্টা রংপুর নগরীর মুলাটোলের অপকর্মের হোতা বেলাল ধরাছোঁয়ার বাহিরে
https://www.obolokon24.com/2015/10/rangpur_22.html
হাজী মারুফ রংপুর ব্যুরো অফিস :
রংপুর নগরীর দক্ষিণ মুলাটোল পাকার সেই ফেন্সিডিল ব্যবসায়ি, মামলাবাজ, ভূমিদস্যু, সরকারি ঔষধ চুরিসহ বহু অপকর্মের হোতা মিজানুর রহমান বেলাল ও তার স্ত্রী রূপালী বেগমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে। অপরদিকে রাজাকার কাওসারের পুত্রসহ অন্যান্যরা স্বাধীনতা যুদ্ধে রংপুরে প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাহী ও তার ভাই শেখ সাদীর জমি দখলের চেষ্টা করে উল্টো গ্রামের সহজ-সরল যুবকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে এবং সেই মামলায় জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা একমাসের অধিক সময় ধরে জেলহাজতে রয়েছে। এঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত কয়েকদিন ধরে এলাকাবাসি তাদের বিরুদ্ধে আবারো গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেছে। অপরদিকে বেলাল ও তার স্ত্রী রূপারী বেগমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অপকর্ম বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বেলাল স্থানী একটি পত্রিকায় উকিল নোটিশ দিয়েছে। সেই নোটিশে পত্রিকার কর্মকর্তাদের সঠিক পদ ব্যবহার না করে তা ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া প্রেরিত নোটিশের কয়েকটি শব্দ পত্রিকা ও সাংবাদিকদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এতে বোঝা যায়, বেলাল সত্যিকারের একজন মামলাবাজ। মামলা করাটাও তার একটা অর্থের উৎস হওয়ায় বেলাল মামলার ব্যাপারে কোন ছাড় দেয় নেই। আবার ওই পত্রিকার কর্তৃপক্ষরা তার বিরুদ্ধে দুই-একদিনের মধ্যে মানহানির মামলা করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, বেলাল তার অবৈধ ব্যবসা ঠিক রাখতে কোতয়ালী থানার দুইজন এসআই, একজন এ্যাডভোকেটসহ এলাকার কয়েকজন যুবককে তার নাম কাওয়াস্তে ঔষধের দোকান ও বাড়িতে টহলে রাখেন। ফলে মিথ্যা মামলা ও হামলার ভয়ে ভদ্র খ্যাত ওই এলাকার লোকজন মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পায় না। আর বেলাল এটিকে পুজি করে তার ব্যবসা দিব্বি চালিয়ে আসছে। কিন্তু এলাকাবাসি এবার গা চারা দিয়ে উঠেছে। সকলে বেলাল গংদের অপকর্ম রূখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ কোতয়ালী থানা ঘেড়াও করে ওই অপকর্মের হোতা বেলাল ও তার স্ত্রী মক্ষিরানি রূপালী বেগম, ফেন্সিডিল ব্যবসায়ি বোন কনা, ছিনতাকারী ভাই হুমায়ূন কবির হিমু, সরকারি ঔষধ চুরির হোতা রুহুল আমীন, দুলাল, নুরুন্নবী, রাজাকার চাচা আশরাফ, হত্যা মামলার আসামী ও ছিনতাইকারী ইমরান, রাফছানসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। অপরদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শেখ সাদী বাদি হয়ে উপরোক্তদের বিরুদ্ধে রংপুর কোতয়ালী লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন। তদন্তকারী এস আই ওয়ালিয়ার বেলালের ঘটনাবলি সত্যতা পান এবং এটি রেডর্ক হবে বলে জানান তিনি।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জুন মৃত কাওসার আলীর পুত্র একাধিক অপকর্মের হোতা মিজানুর রহমান বেলাল ও তার স্ত্রী রূপালী বেগমসহ উপরোক্তরা এবং এলাকার কয়েকজন মুলাটোল জামে মসজিদের সামনে ৯৫ জমির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাহী ও শেখ সাদির ১৯ শতক (মামলা চলমান) জমিতে ঘর তুলতে যায়। যার মৌজা-সাতগাড়া, জে.এল নং-৯৪, খতিয়ান নং-২৭৬, হাল খতিয়ান নং-২৭০, দাগ নং-৪১০৬। সংবাদ পেয়ে জমির মালিক শেখ সাদী এলাকার কয়েকজনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে ঘর তুলতে বাঁধা দেওয়ায় উপরোক্ত আসামীরা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে জুয়েল মারাত্মক আহত হয়। এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, বেলালের বাবা ও চাচা নীলফামারী জেলার তালিকাভূক্ত রাজাকার। এছাড়া বেলাল ও তার স্ত্রী রূপালী বেগম একজন ভূমিদস্যু। এছাড়া বেলালের বোন কনাও ফেন্সিডিল ব্যবসার সাথে জড়িত থাকাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের কথা উল্লেখ রয়েছে এজাহারে।
এলাকাবাসি জানায়, ২৮ জুনের এঘটনা নিয়ে এলাকায় শালিশ বৈঠক বসে এবং বৈঠকে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক জেপলিনকে আহ্বায়ক ও ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠকে এলাকাবাসির গণস্বাক্ষর রয়েছে এবং বেলালসহ ওই ১৯ শতক জমির কাগজ দাখিল করার জন্য কাউন্সিলর কর্তৃক প্যাডে অন্যান্যদেরও পত্র দেন। গত ১ জুলাই বেলাল ওই বৈঠক কমিটিকে তার লিখিত আবেদনে বলেছেন, ঢাকার আজম গং এই জমির মালিক। কাগজপত্র পরবর্তীতে দেখানো হবে। সেখানে তার কোন জমি নেই বলে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেন। পরে উক্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে কাগজাদি পর্যালোচনা করে দেখেন, ওই ১৯ শতক জমির মধ্যে বেলাল গংদের কোন সম্পত্তি নেই। বেলাল গং জোরপূর্বক অন্যের (মামলা চলমান) জমিতে ঘর তুলতে গিয়েছিল এবং আইনভঙ্গসহ থানায় মিথ্যা মামলা করেছেন। ফলে বেলাল গংদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাউন্সিলরের প্যাডে এলাকাবাসির গণস্বাক্ষর সম্বলিত পত্র কোতয়ালী থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে বেলাল ও তার স্ত্রী, বাবা, চাচা, বোন, ভাই, মেয়ের অনেক অজানা কাহিনী বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে।
বেলাল ও তার স্ত্রীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, ভাই আপনারা এতো লেখালেখি করছেন কেন? দোষ-গুন প্রতিটি মানুষের থাকে। তাই আমাদেরও আছে। এছাড়া ঘটনাগুলো নিয়ে কাউন্সিলরের সাথে আমার এক ভাই কথা বলেছে। কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মিমাংসা করে নিব এবং ভুলবশত পত্রিকায় উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান বেলাল।
এ ব্যাপারে ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মিজানুর রহমান বেলাল ও তার পরিবারের সদস্যরা অতি চতুর। তারা মিথ্যা কথা বলে এলাকার মানুষদের বিভ্রান্ত করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা হওয়াসহ গ্রেফতার জরুরি হয়ে পড়েছে।