রংপুর পীরগঞ্জের সোনালী ব্যাংক খালাশপীর শাখায় ঋণ প্রদানে অনিয়ম:ব্যাংক ছাড়ছে গ্রাহকরা
https://www.obolokon24.com/2015/09/rangpur_64.html
হাজী মারুফ রংপুর ব্যুরো
পীরগঞ্জের খালাশপীর সোনালী ব্যাংক শাখায় ঋণ বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শাখাটিতে সেবার মান কমে যাওয়ায় বেশ কয়েকজন সি.সি ঋণ গ্রাহক অন্য ব্যাংকে চলে গেছে। ফলে প্রতি বছরই শাখাটি লোকসান গুনছে।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের (মদনখালী, টুকুরিয়া ও বড় আলমপুর) ব্যাংকিং লেনদেন করে আসছে। ব্যাংকটি থেকে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতাও প্রদান করছে। শাখাটিতে অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ঋণ প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু অনিয়মই নয়, ঋণ প্রদানে মোটা অংকের উৎকোচও নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি চাকরীজীবিদের মাঝে ভোগ্যপণ্যের ঋণ বিতরনে মোটা অংকের উৎকোচ নেয়া হয়েছে। ছাতুয়া দাখিল মাদরাসার সুপার শহিদুল ইসলামের কাছে ৪ হাজার ও শিক্ষিকা-কুলছুমা বেগমের কাছে সাড়ে ৩ হাজার, বাঁশপুকুরিয়া কারিগরি ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম মিয়া কাছে ৬ হাজার, শাহিন মিয়ার কাছে ৬ হাজার, পারভেজ আলম মিনু ৫ হাজার, খালাশপীর বঙ্গবন্ধু কলেজের প্রভাষক আব্দুর রহিম মিয়ার কাছে ৮হাজার টাকা উৎকোচ নেয়া হয়। উল্লেখিত ভোগ্যপণ্যের ঋণ গ্রহীতারা জানায়, ঋণ নিতে গেলে আগেই উৎকোচের অর্ধেক টাকা অফিস খরচের নামে আগেই নেয়া হয়েছে। ওই টাকা না দিলে কোন প্রকার ঋণ পাওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে কৃষি ঋণ গ্রহণের সময় শ্যামদাসেরপাড়া মোজাফ্ফর হোসেন জামিনদাতা নেই, হরিণার লায়লা বেগম, গোপীনাথপুরের মমিন মিয়া মোটা টাকা দিয়েছে। আবার ব্যাংকটির ম্যানেজারের আত্মীয় মোজাফ্ফর হোসেনের ক্ষেত্রে কোন জামিনদাতা না থাকলেও তার ঋণ রিকাভারিতে টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে ঋণ পরিশোধ করেও শুধু উৎকোচের টাকা না দেয়ায় বাঁশ পুকুরিয়া গ্রামের বকুল মিয়া ঋণ পাননি। ব্যাংকটিতে অনিয়ম ও সেবার মান কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই সি.সি ঋণ গ্রাহক মেসার্স রনি ট্রেডার্স, মেসার্স কাফি ট্রেডার্স, মেসার্স নজরুল ইসলাম ব্যাংক ছেড়ে অন্য ব্যাংকের সাথে লেনদেন করছে।
ব্যাংকটির সি.সি ঋণ গ্রহীতা জাকারিয়া মন্ডল যাদু জানান, ব্যাংকের সেবার মান কমে গেছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের সাথে অসাদাচরণ করায় অনেকেই ব্যাংক ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
খালাশপীরহাটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন অভিযোগ করেন বলেন, ব্যাংকে গেলে ম্যানেজার যেভাবে আচরণ করে, তাতে ব্যাংকে যাওয়ার ইচ্ছেই করে না। প্রায়শ ম্যানেজারের সাথে গ্রাহকদের উচ্চবাচ্য লেগেই আছে।
ব্যবসায়ী মাহে আলম মিঠু ও আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, আমরাও ব্যাংক ছাড়ার চেষ্টা করছি। কারণ ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। অপরদিকে ঋণ প্রদানে নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ভেন্ডারদের কাছে বিধি অনুযায়ী রেজিষ্ট্রার মোতাবেক নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকের ষ্টেটমেন্ট, প্রত্যয়ন প্রদানে ম্যানেজার ব্যাংকের নামে টাকা নিলেও তা ব্যক্তিগতভাবে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা টাকা প্রদানের রশিদ চাইলে ম্যানেজার সাফ জানিয়ে দেন, মাসের শেষে এই টাকা একবারে জমা করা হবে।
এ ব্যাপারে ব্যাংকটির ম্যানজার শেখ ফরিদ বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিধি অনুযায়ী অফিস চালাতে গিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়ে এসব অভিযোগ তুলছে। তবে তিনি উৎকোচের ব্যাপারে কিছু বলেননি। সোনালী ব্যাংক রংপুরের ডিজিএম নজরুল ইসলাম ওই শাখার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ব্যাংকটি চালানো খুব কষ্টকর। ওখানে ম্যানেজার হিসেবে কেউ যেতে চায় না। ওই ব্যাংকের ম্যানেজার একটু একরোখা স্বভাবের। যে কারণে প্রায়ই আমার কাছে অভিযোগ আসছে। আর ব্যাংকটিও প্রতি বছর লোকসান শাখা দিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠান চালাতে একটু আধটু অভিযোগ আসতেই পারে।