৭৬ বছরে পা রাখলেন বাংলা ছোট গল্পের রাজপুত্র হাসান আজিজুল হক

সোহেল পারভেজ, রাজশাহী প্রতিনিধি-উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বাংলা ছোটগল্পের এই রাজপুত্র অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কথাসাহিত্যে নান্দনিক স্রষ্টা হাসান আজিজুল হক সোমবার ৭৬ বছরে পা রেখেছেন
 ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যনৱ রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন তিনি ষাটের দশক থেকেই ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ থেকে পর্যনৱ বহু ঘটনার সাৰী তিনি ঘটনাগুলোকেই কাগজে ধরে রাখেছেন পরম মমতায় সমুদ্রের স্বপ্ন-শীতের অরণ্য কিংবা আগুনপাখি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়
জন্মদিনে বিভিন্ন সাামাজিক, সাংস্কৃতিক রাজলনৈতিক সংগঠনসহ অসংখ্য মানুষের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন এই কথা সাহিত্যিক সোমবার সন্ধ্যায় বিহাসে তার নিজ বাসভবনে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানায় কবিকুঞ্জ, রবীন্দ্র সম্মেলন পরিষদ, রাবি সাংস্কৃতিক জোট, রাজশাহী থিয়েটার, উদীচি রাজশাহী শাখা, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার পরিষদ, যমুনা টেলিভিশনের রাজশাহী ব্যুরোসহ বিভিন্ন সংগঠন পরে সেখানে কেক কাটা হয় এসময় সেখানে উপসি ছিলেন বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত সনৎ কুমার সাহা, কবি মতিন বৈরাগী, কবি আরিফুল হক. কবি রম্নহুল আমীন প্রামাণিক প্রমূখ রবীন্দ্র সম্মেলন পরিষদের পরিবেশনায় সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ হয় এসময় উপসি সবাইকে ধন্যবাদ জানান উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ এই কথা সাহিত্যিক

পড়ুন বাংলা ছোটগল্পের এই রাজপুত্রের জীবনী

হাসান আজিজুল হক 


১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে হাসান আজিজুল হক জন্মগ্রহণ করেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই করেছেন তিনি ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন প্রথম যৌবনেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন হাসান আজিজুল হক রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তান সরকারের চরম নির্যাতন ভোগ করতে হয় তাঁকে কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর মেধা-বৃত্তি ফাইলচাপা করে রাখেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন পরে তিনি এসে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে ১৯৫৮ সালে এই কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি
১৯৫৮ সালে শামসুননাহারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁর তিন মেয়ে এক ছেলে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেন ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য খান সারওয়ার মুরশিদ নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁকে রাজশাহী নিয়ে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন হাসান আজিজুল হক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন তিনি
রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় একই কলেজের উদ্যমী তরুণ মিসবাহুল আজীমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাঁজপত্র 'চারপাতা' হাসানের প্রথম লেখা ছাপা হয় সেটি কিন্তু কোনো গল্প ছিল না যাযাবর, সৈয়দ মুজতবা আলী রঞ্জনের সুবাদে রম্যরচনা তখন বেশ জনপ্রিয় রাজশাহীর আমের মাহাত্ম্য নিয়েই প্রথম লেখাটি লিখেছিলেন তিনি 'চারপাতা' ছোট্ট এক কলামে ছাপা হয়েছিল হাসান আজিজুল হকের সেই রম্যরচনাটি
খুলনায় এসে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির উৎসমুখ খুলে গেল প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সন্দীপন'-কে কেন্দ্র করে ষাটের দশকের প্রথম দিকেই নাজিম মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, জহরলাল রায়, সাধন সরকার, খালেদ রশীদ প্রমুখ সংগ্রামী কয়েকজন তরুণের চেষ্টায় গঠিত হয়েছিল 'সন্দীপন গোষ্ঠী' গণসঙ্গীত গণসংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে গোটা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা পরে ১৯৭৩ সালের দিকে তাঁদেরই কেউ কেউ, বিশেষ করে নাজিম মাহমুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নাটক, আবৃত্তি, সাহিত্য, সঙ্গীত সংস্কৃতি চর্চা দিয়ে সরগরম করে তোলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ততদিনে অবশ্য হাসান আজিজুল হক রীতিমতো বিখ্যাত আদমজী এবং বাংলা একাডেমী পুরস্কারের মুকুট তাঁর মাথায় আঙ্গিক, ভাষা বিষয়ের অভিনবত্বে তিনি বাংলা গল্পে তাঁর অবস্থান সংহত করে নিয়েছেন 'সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য', 'আত্মজা একটি করবী গাছ', 'জীবন ঘষে আগুন' এইসব গ্রন্থের গল্পগুলো লিখে মনোযোগ কেড়ে নিয়েছেন বোদ্ধা পাঠকদের ষাটের দশকে বাংলা কথাসাহিত্যের বাঁক বদলের রূপকারদের অন্যতম একজন হিসেবে স্বীকৃতিও মিলতে শুরু করেছে তাঁর
প্রথম গল্পগ্রন্থ 'সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য'-এর প্রথম গল্প 'শকুন'- সুদখোর মহাজন তথা গ্রামের সমাজের তলদেশ উন্মোচিত করেছিলেন তিনি হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: গল্পগ্রন্থ- সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষআগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৮), রোদে যাবো (১৯৯৫), মা মেয়ের সংসার (১৯৯৭), বিধবাদের কথা অন্যান্য গল্প (২০০৭), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭), হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠগল্প (১৯৯৫) উপন্যাস- বৃত্তায়ন (১৯৯১), আগুনপাখি (২০০৬), শিউলি নাটক - চন্দর কোথায় (জর্জ শেহাদের নাটকের ভাষান্তর) প্রবন্ধ- চালচিত্রের খুঁটিনাটি, একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা, কথাসাহিত্যের কথকতা, অপ্রকাশের ভার, অতলের আধি, সক্রেটিস, কথা লেখা কথা, লোকযাত্রা অআধুনিকতা সংস্কৃতি শিশসাহিত্য- লালঘোড়া আমি (১৯৮৪ সালে প্রকাশিত কিশোর উপন্যাস), ফুটবল থেকে সাবধান (১৯৯৮ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গল্প) জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন থেকে পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে হাসান আজিজুল হকের রচনাসংগ্রহ
তিনি ১৯৬৭ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৭০ সালে বাংলা একাডমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আরও অনেক পুরস্কার, পদক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন এসবের মধ্যে রয়েছে লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পদক 'একুশে পদকে' ভূষিত হয়েছেন হাসান আজিজুল হক 'আগুনপাখি' উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন
দীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরনিজ বাড়ি 'উজান'- প্রতিদিনের সবটুকু সময় লেখালেখি নিয়ে বিমগ্ন আছেন তিনি



পুরোনো সংবাদ

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি 2146253594047164828

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item