'বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি সম্পন্ন
https://www.obolokon24.com/2015/01/blog-post_81.html
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমায় সফল করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য বিভাগ তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ একটি বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ। এইদেশে মসজিদের সংখ্যা ও মুসল্লিদের সংখ্যা দেখে বলা যায় তাবলীগ জামায়াতের মেহনত বৃথা যায়নি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জামায়াত বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ,
সিটি কর্পোরেশনসহ গাজীপুরের এলাকাবাসী সকলেরই পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এবারও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।"
আগামী ৫ জানুয়ারি বিএনপির সমাবেশ সম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
"রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ জনসাধারণের ক্ষতির চেষ্টা করলে প্রশাসনের কিছু করার রয়েছে। তবে ৫ জানুয়ারিতে বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি পুলিশের ওপর নির্ভর করছে।"
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন,
"বিশ্ব ইজতেমা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। ইতিমধ্যে বিভাগ অনুযায়ী বন্টন করা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের সেবা দিতে পানি,
টয়লেটসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় ৫০টি ঔষধ কোম্পানী মুসল্লিদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।"
স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন,
"গাজীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ৩৯টি রুটের গাড়ী এ রাস্তা দিয়ে চলে। তাই যে কোন সময় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে গাজীপুর পুলিশ, এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের জন্য কিছু রেকারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।"
ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে বিভাগ ভিত্তিক পর্যালোচনা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইজতেমা প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান।
তিনি জানান,
আমরা ইজতেমার সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বিভাগ ভিত্তিক কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তাদের প্রস্তুতির অগ্রগতিগুলো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ গতবারের তুলনায় ০.৭ শতাং বেশী পানির ব্যবস্থা রাখবে। টয়লেটের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিস দিবে। পাশাপাশি ৪টি জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রতিটি খিত্তায় দুইজন করে দায়িত্ব পালন করবে। ৩টি ট্যাঙ্কার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। কোন অগ্নি দুর্ঘটনার ত্রিশ সেকেন্ড এর মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি থাকবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি পাম্প পানির যোগান দিবে।
তিনি আরো জানান, সড়ক ও জনপদের অধীনে রাস্তা সংস্কার ও পুল নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। রাস্তার ধুলা দূর করতে এলজিইডির ওয়াটার ট্যাংকার পানি ছিটাবে। গাজীপুর সিভিল সার্ভিসের ৩টি টিম ২৪ঘন্টা কাজ করবে। ১৪টি এম্বুল্যান্স সার্বক্ষণিক সেবা দিবে। জরুরী অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রস্তুত থাকবে। ঢাকা,
উত্তরাসহ পার্শ্ববর্তী সব এলাকার হাসপাতালগুলোকে সেবা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সাউন্ড সিষ্টিমের দায়িত্বে থাকবে তথ্য অধিদপ্তর। যানবাহনের জন্য বিআরটিসির ৩০০ বাস প্রস্তুত থাকবে। বিদেশীদের জন্য থাকবে ৫টি বাস। রেলওয়ে প্রতিদিন ৫টি করে এবং ইজতেমার দিন ২২টি স্পেশাল সার্ভিস ছাড়বে। এছাড়া প্রত্যেক ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রা বিরতি করবে।
ইজতেমার মুসল্লিদের সেবায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) অনেকগুলো সেবা দিবে। এ বিষয়ে জিসিসির টঙ্গী অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা কবির আল আসাদ বলেন, "ইজতেমায় আগত মুসল্লি, গণ্যমান্য ব্যক্তি,
প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের জন্য একটি মনিটরিং কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছি।"
তিনি বলেন,
"মুসল্লি ও প্রশসানের জন্য ১৫০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ, ৭০ লক্ষ গ্যালন সুপেয় পানির ব্যবস্থা,
পরিবেশ দুষণ রোধকল্পে ৭০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার এবং মশক নিধনে ২০টি ফগার মেশিন কাজ করবে।"
জিসিসির পক্ষ থেকে আইন শৃংখলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের জন্য র্যাবের জন্য ৯টি ও পুলিশের জন্য ৫টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১১টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সড়ক আলোকায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া সিনেমার অশ্লীল পোষ্টার অপসারণ, ময়লা পরিষ্কারসহ সিটি কর্পোরেশন নানা সেবা মূলক কাজে অংশ নিবে। ইতিমধ্যে এসব বিষয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিদেশী অতিথিদের ভিসা ও আপ্যায়নের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কথা বলেন।
তিনি জানান,
আমরা সাধারণত ৪৫ দিনের ভিসা দিব। যারা তিন চিল্লায় আসবেন তাদের ১৩০দিনের ভিসা দেব। তবে,
তা হবে তাবলীগের মুরব্বিদের সুপারিশ অনুযায়ী। তবে কোন ধরণের জঙ্গি বা ক্ষতিকর গ্রুপের সন্দেহ হলে আমরা ভিসা দেব না।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেকদেশে ইবোলা ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় আমরা নির্দেশ দিয়েছি বিদেশীদের ইবোলা ভাইরাস পরীক্ষা করে একটি সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য। সার্টিফিকেট দেখে ভিসা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেকদেশে ইবোলা ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় আমরা নির্দেশ দিয়েছি বিদেশীদের ইবোলা ভাইরাস পরীক্ষা করে একটি সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য। সার্টিফিকেট দেখে ভিসা দেয়া হবে।
আইন শৃংখলা প্রস্তুতির বিষয়ে বক্তব্য দেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন আর রশিদ। তিনি বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা পাঁচ স্তরে নিরাপত্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। ইজতেমা এলাকাকে ট্রাফিক জোনসহ পাঁচটি জোনে ভাগ করে প্রতি জোনে দুইজন এএসপিকে দায়িত্ব পালন করবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে চেকিং ব্যবস্থা থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে, টহল পুলিশ থাকবে, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে, র্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের অধীনে পাঁচটি সাব কন্ট্রোলরুম থাকবে। দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য ৩টি হলিপ্যাড থাকবে। ইজতেমার নিরাপত্তায় সর্বমোট প্রায় ৯ হাজার ৫০০ পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
সভাপতির বক্তব্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, "বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় জামায়াতের আয়োজনে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি বরাবরের মত এবারও মুসল্লিদের সেবা দিতে আমরা সফল হব।"
পর্যালোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক, পুলিশের নব নিযুক্ত মহা পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র এড. আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলাম,
ইজতেমার মুরুব্বি সাবেক সচিব বদিউর রহমান ও জিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।