পাইপ থেকে শিশু উদ্ধারে চলছে রূদ্ধশ্বাস অভিযান

ডেস্ক রিপোর্ট- রাজধানীর শাহজাহানপুরস্থ রেলওয়ে কলোনী মাঠ সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত পানির পাম্পের ৪০০ ফুট গভীর একটি পাইপে আটকা পড়া শিশুটিকে উদ্ধারে চলছে রূদ্ধশ্বাস অভিযান। শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে শিশুটি ওই পাইপে পড়ে যায়। এর পর সাড়ে ৩টা শুরু হয় এ অভিযান। সর্বশেষ রাত ১২টা পর্যন্ত ক্রেন দিয়ে পাইপ উঠিয়ে গ্যাসচালিত যন্ত্র দিয়ে কেটে ৪ বছর বয়সি শিশু জিয়াউর রহমান জিহাদকে উদ্ধারের
জন প্রানান্ত চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান এ উদ্ধার অভিযান তদারকি করছেন। জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলা করতে গিয়ে পাম্পের ওই পরিত্যক্ত পাইপের ভেতর শিশুটি পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে।
এদিকে ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব ও পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। টান টান উত্তেজনা নিয়ে টেলিভিশনে অভূতপূর্ব এ উদ্ধার অভিযান দেখছে সারা দেশের মানুষ। কয়েক হাজার উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। উৎসুক সাধারণ মানুষকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান শাহজাহানপুর থানার ওসি মেহেদী হাসান।
অন্যদিকে এ ঘটনার পর রাতে ওয়াসার মহাপরিচালক প্রকৌশলী তাকসেম এ খান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান জানান, পাইপটির ব্যাস প্রায় এক ফুট। সর্বশেষ একজন ফায়ার কর্মীকে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য পাইপ দিয়ে নিচে নামানোর প্রস্তুতি চলছে। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে বিকেল ৫টার দিকে পাইপের ভেতর রশির সাহায্যে খাবার জুস ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। উদ্ধার অভিযানের শুরুতে গর্তে আলোর জন্য দুটি টর্চলাইট পাঠানো হয়। তিনি জানান, শিশুটির নাম জিয়াউর রহমান জিহাদ। তার বয়স ৪ বছর। বাবার নাম নাসিরুদ্দিন। তারা রেলওয়ে কলোনিতে থাকে। তাদের গ্রামের বাড়ী শরিয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায়।
উদ্ধার কর্মীরা শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ৫ বার বিভিন্ন কায়দায় দড়ি ফেলেও ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় ভেতরে থাকা ৩ ইঞ্চি ব্যাসের সাড়ে ৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি পাইপ ক্রেইন দিয়ে টেনে তুলে জায়গা করা হয়েছে। ওই পথে তুলনামূলভাবে সরু নতুন একটি পাইপ ঢুকিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের একটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে রাতে ঘটনাস্থলে এসেছেন বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল।
তাদের সঙ্গে কথা বলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা বুয়েটের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতেই চেষ্টা চালাতে চান। ইতোমধ্যে পাইপ কেটে ওই ক্যাচার বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আরাফাত ধ্রুব জানান, তাদের ওই পাইপের নিচের অংশে এমন ব্যবস্থা থাকবে যাতে সেটি নিচে পৌঁছে গুটিয়ে রাখা একটি অংশ খুলে দেবে শিশুটিকেসহ তা উপরে উঠিয়ে আনার ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়া শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সেখানে ক্যামেরা ও আলোসহ বশির আহমেদ নামের এক স্বেচ্ছাসেবীকে নামানোর কথা ভাবা হলেও পরে নিরাপত্তার খাতিরে তা বাতিল করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের স্বেচ্ছাসেবী বশির এর আগে রানা প্লাজার উদ্ধার অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন।
পক্ষান্তরে ঘটনার ৯ ঘণ্টা পর রাত ১১টার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ওয়াসার ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটিও পাইপে নামানোর কথা ভাবা হচ্ছে। জিহাদকে উদ্ধার করা সম্ভব হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা সম্বলিত একটি এম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে প্রস্তুত রেখেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ উদ্ধার অভিযানের ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর শাকিল নেওয়াজ।
নাসিরের সহকর্মী আবদুল খালেক শুরু থেকেই সরাসরি উদ্ধার অভিযানে যুক্ত আছেন। তিনি জানান, এই গভীর নলকূপে উপরের দিকে ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ আছে একটি নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত। তারপর রয়েছে মোটর ও ছাঁকনি। পাম্পের নিচ থেকে ৩ ইঞ্চি ব্যাসের আরেকটি সরু পাইপ ৩০০ ফুটের বেশি নিচে চলে গেছে। মাঝখানে ওই পাম্পের ওপরই জিহাদ রয়েছে বলে জানান খালেক।
সন্ধ্যার পরও উদ্ধারকর্মীরা ওপর থেকে কয়েক বার চিৎকার করে ডেকে জিহাদের সাড়া পেয়েছেন। সে সময় দড়িতে বেঁধে তার জন্য দুধের বোতলও পাঠানো হয়। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সিলিন্ডার থেকে গর্তে অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে । শিশুটির বাবা নাসিরউদ্দিন মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের নৈশ প্রহরী। ওই কলোনির ৪১ নম্বর বিল্ডিংয়ে তাদের বাসা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জিহাদ ওই গর্তে পড়ে যায়। একটি চটের বস্তা দিয়ে পাইপের মুখ ঢাকা থাকায় সে বুঝতে পারেনি।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট বিকাল ৪টার দিকে বাচ্চাটিকে উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করে। কিন্তু পাইপের ব্যস মাত্র ১৪ ইঞ্চি হওয়ায় তাদের কোনো চেষ্টায় এ পর্যন্ত সাফল্য আসেনি। ৫ বারের মধ্যে ৪ দফা ওপর থেকে ফেলা দড়ি জিহাদ ধরতে পারলেও তাকে তুলে আনা যায়নি। এরপর বিশেষভাসে সেলাই করা একটি চটের বস্তা পাঠানো হয়। তাতেও কোন কাজ হয়নি। তারপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ক্রেন দিয়ে টেনে ভেতরে থাকা সরু পাইপ টেনে তুলে কেটে কেটে সরিয়ে নেয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ে কলোনির পশে মাঠের ফাঁকা জায়গায় ওই গভীর নলকূপ দিয়ে ঠিকমতো পানি না ওঠায় তা পরিত্যক্ত করা হয়। খানিকটা দূরে পানি উত্তোলনের জন্য আরেকটি পাম্প বসানো হচ্ছে।